May 19, 2024, 7:50 pm

মানসিক প্রশান্তি লাভ ও হতাশামুক্তির কার্যকরী আমল

যমুনা নিউজ বিডিঃ মানসিক অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা জীবনকে অসহ্য করে তোলে। মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর প্রিয় উম্মতকে এমন পরিস্থিতিতে মানসিক প্রশান্তি লাভের বিশেষ আমল ও দোয়ার তালিম দিয়েছেন। এ বিষয়ে একটি মূল্যবান আমল হলো—অধিক হারে দরুদ পড়া। দরুদ পাঠ আল্লাহ তাআলার রহমত প্রাপ্তির বিশাল মাধ্যম। আত্মপ্রশান্তি লাভের সহজ উপায়। এটি এমন আমল যা সর্বদা কবুল হয়।

মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্য কোরআন তেলাওয়াতসহ আরও অনেক আমল রয়েছে। তবে তা আল্লাহ তাআলা তা কবুল করতে পারেন আবার কবুল না-ও করতে পারেন। কিন্তু দরুদ শরিফ এমন একটি মাকবুল আমল যা পাঠ করলেই আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন।

উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দরুদ পাঠ করতে চাই। আপনি বলে দেন আমি দরুদে কতটুকু সময় দেব? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও! আমি বললাম এক চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও, যদি আরো বাড়াও তোমার জন্যে ভালো। আমি বললাম অর্ধেক সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু সময় পড়তে পার, যদি এর চেয়ে আরো সময় বাড়াও তোমার জন্যে ভালো। আমি বললাম, তাহলে সময়ের দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও, যদি আরো বাড়াও তোমার জন্যে ভালো। আমি বললাম, সম্পূর্ণ সময় আমি আপনার ওপর দরুদ পাঠ করায় রত থাকব। তখন তিনি বললেন, তাহলে এখন হতে তোমরা পেরেশানি দূর হওয়ার জন্য দরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দরুদই যথেষ্ট।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৭)

সুবহানাল্লাহ! হাদিসটি লক্ষ করুন- নবীজির ওপর দরুদ পাঠ কত মহান আমল! অথচ আমাদের অনেকে দরুদ পাঠকে খুব সাধারণ কিছু মনে করে থাকি। বাস্তবে তা অসাধারণ আমল। উল্লেখিত হাদিসটিই তার প্রমাণ।

এছাড়াও আল্লাহ তাআলা যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা দূর করে দেবেন— এমন একটি দোয়ার উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে— একবার রাসুল (স.) মসজিদে প্রবেশ করলে সেখানে আবু উমামাহ নামক এক আনসারি সাহাবীকে দেখতে পেয়ে তাকে বলেন, হে আবু উমামাহ! কী ব্যাপার! আমি তোমাকে নামাজের ওয়াক্ত ছাড়া মসজিদে বসে থাকতে দেখছি? তিনি উত্তরে বলেন, সীমাহীন দুঃশিন্তা ও ঋণের বোঝার কারণে হে আল্লাহর রাসুল। তখন তিনি (স.) বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব না, তুমি তা পাঠ করলে আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দেবেন? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল। তিনি (স.) বলেন, তুমি সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দোয়া বলবে— اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ العَجزِ وَالكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبنِ وَالبُخلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ غَلَبَةِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল। অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে। আবু উমামাহ (রা.) বলেন, আমি তা-ই করলাম। ফলে মহান আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা দূর করলেন এবং আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দিলেন। (আবু দাউদ: ১৫৫৫)

মানসিক প্রশান্তিলাভের জন্য কোরআন-হাদিসে আরও কিছু আমলের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন- তাকদিরের ওপর অগাধ বিশ্বাসস্থাপন, আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ, কোরআন তেলাওয়াত, সময়মতো নামাজ আদায়, বেশি বেশি ইস্তেগফার, ধৈর্যশীলতা, পরামর্শভিত্তিক কাজ ইত্যাদিতেও প্রশান্তিলাভের উপায় রয়েছে। মানসিক প্রশান্তির দোয়া, হতাশা থেকে মুক্ত থাকার দোয়া, যে দোয়া পড়লে মনে প্রশান্তি আসে

মনে রাখতে হবে, শারীরিক সুস্থতার মতো মানসিক সুস্থতাও খুব জরুরি। আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে মনের যত্ন নিতে হবে। মনের যত্ন তো কেবল তিনিই যথাযথ নিতে পারেন, যিনি সুন্নতের পাহারাদার। তাই সর্বাবস্থায় নবীজি (স.)-এর শেখানো আমল ও দোয়া পড়ে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য কামনা করা মুমিন মুসলমানের উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের অস্থিরতা দূর করে দিন, মানসিক প্রশান্তি দান করুন। আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © jamunanewsbd.com
Design, Developed & Hosted BY ALL IT BD